জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী বা জুলাইয়ের নামে কেউ যদি অপকর্ম করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বৈষম্যবিরোধী বা জুলাইয়ের নাম বিক্রি করে, ব্যবহার করে কেউ যদি অসাধু কাজ ও অপকর্মের চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরাও দলের ভেতরে এ ধরনের কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি ব্যবস্থা নেয় আশা করা যায়, এটা আর হবে না। যারা অসাধু কাজ করছে, তাদের কঠোরতম বিচার হওয়া উচিত।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জুলাই মাসজুড়ে দেশের ৬৪টি জেলায় ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করে এনসিপি। আজ রোববার বিকেল ৪টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এই সমাবেশের মাধ্যমে পদযাত্রা কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি হবে।
এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, যারা জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি কাজ করছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত। একটা বৈষম্যবিরোধী দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল।
তিনি বলেন, গত বছরের ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপের দাবিতে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামীকাল (আজ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে জুলাই পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হবে। এই সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার পাঠ করা হবে। সেখান থেকে এনসিপির পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সমাবেশের কারণে জনভোগান্তির বিষয়ে নাহিদ বলেন, আগামীকাল (আজ) এইচএসসি পরীক্ষা আছে। এ ছাড়া ছাত্রদলের সমাবেশ রয়েছে। তারা আমাদের অনুরোধে কর্মসূচি স্থানান্তর করে শাহবাগে নেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ জানাই। একই এলাকায় দুটি বড় কর্মসূচি থাকায় ভোগান্তি হতে পারে। একাধিক বড় সমাবেশের কারণে ঢাকাবাসী এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে অগ্রিম দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানের প্রস্তাবনা ও তপশিলে উল্লেখ করে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। পাশাপাশি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুরাহা হয়ে সব রাজনৈতিক দল এতে স্বাক্ষর করবে। আমরা বলেছি, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি থাকতে হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সরকারের আমলেই এই সনদ কার্যকর করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই পদযাত্রায় আমরা গণহত্যার বিচার, সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়েছিলাম। পাশাপাশি আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের কথা বলেছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা জানতে পেরেছি, জুলাই ঘোষণাপত্রটি সরকার আগামী ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষ এবং রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিল, ৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদের বিষয়টিও যেন সুরাহা হয়। যদিও ঐকমত্য কমিশন এখনও জানায়নি ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর বিষয়গুলোর সমাধান কী হবে।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, এই এক বছরে তার পূর্ণতা আমরা লক্ষ্য করিনি। জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে সেই আকাঙ্ক্ষাটা আংশিক পূরণ হবে। দেশের একটা গণতান্ত্রিক সংস্কার হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ প্রমুখ।
সমাবেশ নিয়ে প্রস্তুতি
এক দফা ঘোষণার বর্ষপূর্তি এবং জুলাই পদযাত্রার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি উপলক্ষে গতকাল শহীদ মিনারে মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সমাবেশ বিকেল ৩টায় হওয়ার কথা থাকলেও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে এক ঘণ্টা পিছিয়ে এই সমাবেশ বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সারাদেশ থেকে এক লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এই সমাবেশে আসবেন বলে আশা করছে দলটি।